রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

ইরাবতীর সুখের সংসার- না পড়লে চরম মিস।



- আসসালামু আলাইকুম, গুড মর্নিং সুইটহার্ট। - ওয়ালাইকুমুস সালাম, আরেকটু ঘুমাতে দাও প্লিজ। - না, আর ঘুমাতে হবে না। ৭.০০ টা বেজে গেছে। অফিস যাবে তাড়াতাড়ি ওঠো! - ধুর! বাদ দাও অফিসের চিন্তা। আজ একটু ঘুমিয়ে নেই। কাল থেকে সকাল সকাল উঠে যাবো - কাল বলতে কোন দিন নাই। যা করার আজ থেকে করতে হবে! তাড়াতাড়ি ওঠো! নয়তো আমি পানি ঢেলে দিচ্ছি। ইরার চেঁচামেচিতে আর শুয়ে থাকতে পারি না। চোখ কচলাতে কচলাতে তাকাই। দুচোখে এখনো দুনিয়ার ঘুম। চোখ কচলানোর মধ্যেই টের পাই কপালের মধ্যে তার ঠোটের আলতো এক ছোয়া। আর দুই কাধে মাখনের মতো নরম দুটো হাতের স্পর্শ। পরক্ষনেই ধাক্কা দিয়ে সোজা করে বসিয়ে দেয় । আমি একটু চোখ খুলে থাকাই। আলসেমি জড়ানোই থাকে। ইরা চলে যায়। কিছুক্ষণ পর আবার এসে বলে- - এখনো ঘুম পাচ্ছে? - হুম। - বুঝেছি, পানি লাগবে! - না। ইরা কপট রাগ দেখিয়ে আমাকে বিছানা থেকে টান দিয়ে নামিয়ে দেয়। রক্তচক্ষু করে ঝাড়ি দিয়ে বলে, বাথরুমে ঢুকো। আমি সুবোধ বালকের মত বাথরুমে ঢুকে যাই। ফ্রেশ হয়ে আসি। চা খাই। হঠাৎ ঘড়ির তাকিয়ে আমি হতভম্ব হয়ে যাই। তাড়াহুড়ো করে বের হই। পেছন থেকে ইরা ডাক দেয়- - এই যে শুনো। - তাড়াতাড়ি বল। - উফ! ভূলোবাবু! ভুলে যাও কেন?, বুঝি না। আমার সারাদিনের এনার্জি দিয়ে যাও। ইরা গজরাতে গজরাতে আমার পাশে আসে। আমার সোজাসুজি সামনে দাড়িয়ে দুই হাত আমার দুই কাধে রাখে। চোখবুঝে দাড়িয়ে থাকে। আমি তার কপালে আদর দিয়ে একটা চুম্বন একে দেই। তারপর অফিসের উদ্দেশ্যে চলি। ***** ইরিনা জামান ইরা, আমার স্ত্রী। শুধু স্ত্রী না, আমার সব। ইরা ফর্সা রঙের অধিকারী না । তবুও আমার কাছে সে সুন্দরী । তার ডাগর ডাগর দুই নয়নের দিকে তাকিয়ে আমি পাড়ি দিতে পারি এ মহাবিশ্ব। আমি আমার ইরাকে ভালোবাসি। ইরাকে আমি হারাতে চাইনা । ইরার সাথে আমার প্রথম দেখা তার বাসায়। অনেকটা সিনেমার কাহিনী! ঘটনাটা খুলে বলি। তখন থাকতাম বাড্ডার আব্দুল্লাহবাগ । একটা মেসে আমি আর আমার এক বন্ধু সহ আরো কয়েকজন। বেশ কয়েকদিন ছিলাম ঐ এলাকায়। আমরা যে গলিটাতে থাকতাম তার শেষ মাথায় ইরাদের বাসা। ইরা প্রতিদিন সকালে কলেজে যেত,দুপুরে আসত। আবার বিকালে কোচিংয়ে যেত সন্ধ্যায় আসত। একদিন ইরা সন্ধ্যার দিকে কোচিং থেকে আসছিল। আমার রুমমেটরা গলিতে অড্ডা দিচ্ছিল। সাথে আমার ঐ বন্ধুটিও ছিল। ইরাকে ওরা রাস্তায় দাড় করালো। যে যা পারছে মন্তব্য ছুড়ছে । আমি একটু দূরে দোকানে বসেছিলাম। মাঝে মধ্যে তাকাচ্ছিলাম । দৃষ্টি টা ওখানেই আটকে গেল । ইরার কোন ভাবান্তর নেই । সবাই মিলে তাকে হেনস্থা করছে। আমি দেখলাম সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে । গাল বেয়ে পানি পড়ছে । আমি বসা থেকে উঠলাম। হঠাৎ কেউ একজনের উপস্থিতি টের পেয়ে ওয়া সরে গেলো। ইরা তার বাসায় চলে গেলো। আমিও আমার যায়গায় বসে পড়লাম। মাগরিবের নামাজ পড়ে বাসায় গিয়ে বন্ধুকে বললাম চল ঘুরে আসি। বাইকে করে সোঝা ইরাদের বাসায় চলে গেলাম। ইরার আম্মু গেট খুলে দিলেন। আমি বললাম আন্টি ইরাকে ডাকেন। আন্টি অনেকটা চমকে গেলেন। আমিও মোটামুটিভাবে আরেকটু জোর দিয়ে বললাম ইরাকে ডাকেন। ডাকা লাগলো না। চেচামেচিতে ইরা নিজেই বেরিয়ে আসল। আমি আমার বন্ধুকে ধাক্কা দিয়ে ইরার সামনে দিয়ে বললাম সরি বল। ইতস্থ করছে দেখে জোরে ধমক দিলাম। তারপর তাকে হালকা একটু নসিহত করলাম । রাগে গজগজ করতে বেরিয়ে গেলো। আমি বন্ধুর পক্ষ থেকে আবার ইরার কাছে ক্ষমা চাইলাম। সেদিন প্রচন্ড রেগে ছিলাম। আমি আমার রুমমেটদের সাথে মারামারি করেছিলাম । সেদিনের পর থেকে ইরাদের পরিবারের সাথে আমার সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল। মাঝে মাঝে ইরা আমার কাছে আসত। আন্টি এটা সেটা বানিয়ে পাঠাতেন। ঘটনার মাসখানেক পর ইরা কোচিং ছেড়ে দিলো। টাকার অভাবে। তাই আমি মাঝে মাঝে ইরাকে তার বাসায় গিয়ে পড়াতাম। আমি জেনেছিলাম ইরা আর তার মা একা থাকেন বাসায়। ইরার বাবা নেই। মা বাসায় সেলাই কাজ করেন। ইরাও মায়ের সাথে কাজ করে পড়ালেখার ফাঁকে। শুধু যে পড়ানো তা না। আমি এক আকর্ষণে তার কাছে ছুটে যেতাম । ইরার কোন বন্ধু বান্ধবী ছিল না । আমি যে আস্তে আস্তে খুব গভীর ভাবে ইরার প্রেমে পড়ে গিয়েছি, সে কথা নিজে বুঝলেও তাকে বুঝাতে আমার ভয় লাগতো । যদি মনে করে সে গরীব বলে আমি দয়া করছি । আমার কাছ থেকে চলে যায়, আমি তখন কি করব ? সেদিন পড়ানো শেষ করে খুব সাহস করে ইরার হাতে দুই লাইনের একটা চিঠি দিয়ে আসলাম। বললাম উত্তর আমাকে মোবাইলে জানাবে। একদিন দিন পার হয়ে গেল কোন উত্তর নাই। দ্বিতীয় দিন আমার সেই রুমমেট প্লাস বন্ধু যাকে ইরার কাছে সরি বলতে বলেছিলাম সে আমাকে বলল ইরা নাকি তাকে দিয়ে খবর পাঠিয়েছে যাওয়ার জন্য। তাকে জড়িয়ে ধরলাম । সে শুধু বলেছিল – আমার উপর আর রাগ করিস না আর। আমি ভাল হয়ে গেছি। ছোট্ট একটা হাসি দিয়ে শুধু জিজ্ঞেস করলাম , কবে যেতে বলেছে ? ইরা আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। আমি যাওয়ার পর ইরা প্রথম যে কথা বলল। তা হলো- আমার সারা জীবনের সঙ্গী হতে পারবে? কানে কানে বললাম – তোমার সঙ্গী হলে আমার রাণী হয়ে থাকবে তো ? ইরা হাসলো । আস্তে আস্তে দিন যায় । রাত পোহায় । আমার পড়াশুনা শেষে একটা চাকরিও জুটে যায় । আম্মাকে ইরার ছবি দেখালাম। আমার কোন পছন্দ আমার আব্বা আম্মা ফেলে দেন নি কোনদিন। এবারও ব্যতিক্রম হলো না। শুধু জিজ্ঞেস করলেন এই মেয়েটাকে বিয়ে করলে আমি খুশি হবো কি না? আমার খুশিতেই আমার আব্বা আম্মা খুশি। আমিও ইরার মত বউ পেয়ে খুশি। ******** অফিস থেকে ফিরতে বিকাল হয়ে যায়। অসরের নামাজ শেষ হয় হয় প্রায়। বাসায় এসে কলিং টিপ দেই। ইরা দরজা পুরো না খুলে একটু ফাক করে জিজ্ঞেস করে- -নামাজ পড়ে এসেছো? -না! এইতো পড়বো। -ইরা রাগ হয়ে যায়! জগতের আশ্চর্য কয়েকটি সৌন্দর্যের একটি হল ডাগর ডাগর নয়নের মেয়েদের নাকের পটকরা ফুলিয়ে রাগ করতে দেখা। সেই সৌন্দর্যটা ইরার আছে। আমি দেখি। মন ভরে দেখি। কিন্তু বেশিক্ষণ দেখা যায় না। তার আগেই দড়াম করে দরজা বন্ধ হয়ে যায় এবং ওপাশ থেকে মায়াবিনীর চেঁচামেচি শোনা যায়, "নো নামাজ নো এন্ট্রি, নামাজ না পড়লে এই বাসার দরজা চিরতরে বন্ধ। দেখি নামাজ না পড়ে কে এই বাসায় ঢুকে। ভুলোবাবু, আলসেবাবু, ঘুমবাবু কোন বাবুকেই আমি চিনি না।" আমি হাসি। গর্বের হাসি। তৃপ্তির হাসি। হাসতে হাসতে চলে যাই মা’বূদের কাছে। শুকরিয়া জানাই এমন একজন মানুষ আমার তাকদীরে লিখে দেওয়ার জন্য।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন